আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তেল ওতপ্রোতভাবে
জড়িয়ে আছে। সে রান্নার জন্যই ব্যবহার
হোক বা রূপচর্চায়। তেল
নিয়ে আমারও একটু দুর্বলতা আছে। বিভিন্ন রকমের তেল আমার সংগ্রহে রয়েছে। এরমধ্যে
সচলাচল আমরা যেগুলি ব্যবহার করি তা তো আছে পাশাপাশি রয়েছে কিছু Essential Oil এবং আমার নিজে ঘরে
তৈরি তেল। যারা আমার ইংরেজি ব্লগ ফলো করেন, তারা হয় তো পড়েছেন আমার বিভিন্ন ধরনের
তেলের রিভিউ। আজকের পোস্টে আমি এমন ৫ টি তেলের ব্যবহার নিয়ে লিখছি, যা খুব সহজে
পাওয়া যায়, এমন কি আমাদের অনেকেই সংগ্রহে রয়েছে।
১। নারিকেল তেল
“ডেইলি রূপচর্চায় নারিকেল তেল” এই শিরোনামে
আমার একটি পোস্ট আছে, যেখানে আমি নারিকেল তেলের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার উল্লেখ
করেছিলাম।
যাদের ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে গেছে তাদের
জন্য একটি খুব ভালো টিপস হল, নারিকেল তেল ও ওটস এর মিশ্রন। ২ চামচ ওটস ও ১ চামচ
নারিকেল তেল একটি পাত্রে নিয়ে গরম করে নিন। মিশ্রণটি পেস্টের মতো করে নিয়ে হালকা
গরম অবস্থায় ত্বকের লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মতো। তোলার সময় মাসাজ করে
তুলেনিন।
এছাড়াও ভঙ্গুর, শুষ্ক চুলের হাত থেকে
রক্ষা পেতে প্রতিদিন সামান্য নারিকেল তেল হাতে নিয়ে চুলে হালকা ভাবে লাগিয়ে নিন। পিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করতে এবং চোখের
পাতায় নিয়মিত নারিকেল তেল লাগালে আখিপল্লব দীর্ঘ ও ঘন হয়।
নারিকেল তেল খুব ভালো মেকআপ রিমুভার
হিসাবে কাজ করে। ওয়াটার প্রুফ মাস্কারা এবং মুখের যে কোন রকমের মেকআপ তুলতে
নারিকেল তেল সরাসরি ব্যবহার করা যায়। একটি তুলোর প্যাডে নারিকেল তেল নিয়ে ব্যবহার
করুন।
২। অলিভ
অয়েল বা জলপাই তেল
এই
তেলটি আমার সব থেকে প্রিয় তেল। আমি নারিকেল তেল থেকেও অলিভ তেলের ব্যবহার বেশি
করি। অলিভ তেলের উপরেও আমার দুটি ব্লগ রয়েছে। অলিভ তেলর জাদুকারি ব্যবহার - পর্ব / ১ ও পর্ব / ২ , অবশ্যই দেখে নেবেন। অলিভ
তেলের সব থেকে বেশি ব্যবহার আমি ত্বকের জন্য করি। আমার ত্বক শুষ্ক ধরনের তাই আমি
সপ্তাহে দুদিন অলিভ তেলের সঙ্গে কেসটার ওয়েল মিশিয়ে মুখের ত্বক মাসাজ করি। এতে
ত্বকের শুষ্কতা তো দূর হয়ই, পাশাপাশি ত্বক অনেক উজ্জ্বল দেখায়। মেকাপ
রিমুভার হিসাবেও আমি এই তেল ব্যবহার করি। চুলে ব্যবহারে সময় আমি একটি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে নিয়ে অলিভ তেল মাথায় লাগাই।
Read more: নিম তেলের ব্যবহার
৩। তিলের তেল
তিলের তেল
ত্বকের চাইতেও বেশি আমি চুলের জন্য বেশি ব্যবহার করি। এই তেলটি চুলের বৃদ্ধিতে খুব
সাহায্য করে। এই জন্য চুলে যদি হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে চান, তাহলে এক্ষেত্রে
তিলের তেল ব্যবহার করুন। তিলের তেলের মধ্যে ওমেগা -৩, ওমেগা
-৬ ও ওমেগা -৯ এর মতো অতিঅত্যাবশ্যক উপাদান রয়েছে, ফলে মাথায় হট ওয়েল মাসাজ ক্রলে,
চুলের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। পাশাপাশি চুলের গোঁড়াও মজবুত হয়। যাদের খুসকির সমস্যা
রয়েছে তারা সপ্তাহে এক থেকে দুবার তিলের সঙ্গে নারকেলের তেল মিশিয়ে চুলে মাসাজ করতে পারেন।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তিল তেল ত্বকের বয়সের ছাপ দূর
করতে সাহায্য করে। এই তেল সরাসরি ত্বকে লাগানো যায়। যাদের ত্বকে রোদে পোড়া
ভাব রয়েছে, তাদের
ওই পোড়া দাগ দূর করতে পারেন এ তেল মাসাজের মাধ্যমে।
৪। বাদাম
তেল
অলিভ তেল ও
নারিকেল তেলের মতো আমি বাদাম তেল বা আমন্ড ওয়েলও খুব বেশি ব্যবহার করি। ত্বক ও
চুলের যত্নে এই বাদাম তেলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। যাদের চুলে কালার কিংবা রিবন্ডিং করা
তারা কিন্তু চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বাদাম তেল
ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও যারা খুব বেশি আয়রন কর্লার ব্যবহার করেন তাদের জন্যও আমন্ড তেল উপকারি।
বাদাম তেলে আছে আছে ভিটামিন ই। তাই এটি ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়। ত্বক এই তেল দিয়ে নিয়মিত মাসাজ করলে ত্বকে রক্ত সঞ্চাল্ন বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বক কে সূর্যের হাত থেকে বাঁচায় এবং ত্বক কে ড্যামেজ এর হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের ত্বকে সান বার্ন আছে, তারা বাদাম তেল ও নারিকেল
তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে সপ্তাহে ৩ দিন মাসাজ করুন।
কালো ঠোঁটের সমস্যা অনেকেরই। এই সমস্যা দূর করার একটি উপায় হল, ১ চামচ বাদাম
তেলের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে ঠোঁটে লাগিয়ে শুয়ে পরুন। প্রতিদিন এই
প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেখুন, খুব তাড়াতাড়ি ফল পেয়ে যাবেন।
৫। সরিষার
তেল
সরিষার তেল ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম, জিঙ্ক এবং বেটা ক্যারোটিন থাকে। আর থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। চুলের বৃদ্ধিতে ভিটামিন “এ” এর ভূমিকা অপরিসীম। অন্যদিকে সরিষার তেল ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্যাটি এ্যাসিড সমৃদ্ধ।
ফ্যাটি এ্যাসিড আপনার চুলকে ন্যাচারাল লুক দিয়ে
থাকে। ত্বকের জন্য এই এতো গুন সমৃদ্ধ তেলটি আদর্শ। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে সরিষার তেল ত্বকে লাগানো পছন্দ করি না। কিন্তু সরিষার
তেল ত্বকে আর্দ্রতা জোগাতে সাহায্য
করে। শীতে ফাটা ত্বকে এর মালিশ খুব উপকারী। ঠান্ডার সময় উষ্ণতাও
দেয় এই তেল। এই তেল আমি শুধু চুলের জন্যই
ব্যবহার করে থাকি। সরিষার তেল গরম করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট
রেখে শ্যাম্পু করে নেই। এতে চুল কালো, ঘন হয়
এবং শ্যাম্পুর পর চুল চকচকে হয়ে উঠে।
এই তেলগুলি ছাড়াও আমার
সংগ্রহে আরও কিছু Essential
Oil রয়েছে। যার নাম ও ব্যবহার আমি অন্য আরেকটি পোস্টে
সেয়ার করবো। এই ৫ টি তেলের মধ্যে আপনার
কোনটি এবং কেন বেশি পছন্দ জানাতে ভুলবেন না। আর আপনি কোন তেলটি কিভাবে
ব্যবহার করেন সেটিও অবশ্যই বলবেন। কেমন লাগলো টিপসগুলি কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
টিপসগুলি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন !