যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা একদিকে যেমন লাকি তেমনি আনলাকিও। লাকি এই জন্যই বলছি যে, তেল ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং ত্বকে বলীরেখা ও মুখের রঙের কোন পরিবর্তন হওয়া থেকে রক্ষা করে। আনলাকি হওয়ার কারন তৈলাক্ত ত্বকে খুব সহজে ধুলোবালি আটকে যায় এবং অতিরিক্ত তেল মুখের পোরগুলোকে বন্ধ করে দেয়।এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে ব্রন হওয়ার প্রকোপ বাড়ে। তাই বিড়ম্বনারও কম না । আবার ব্ল্যাকহেডস ,হোয়াইট হেডস এর সমস্যা তো রয়েছেই। তাই এই ধরেনর ত্বকের যত্ন অনেক বেশি করতে হয়। আজকের পোস্টে এমন কিছু টিপস শেয়ার করবো, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের আশা করি কাজে লাগবে।
প্রথমে কি করে বুঝবেন আপনার ত্বক তৈলাক্ত ঃ
সব থেকে সহজ উপায় হল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে ত্বকে চকচকে এবং পিচ্ছিল ভাব দেখা যাচ্ছে কি না। যদি উওর হ্যাঁ তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ত্বক তৈলাক্ত । এই পরীক্ষাটি যে দিন করবেন, তার আগের রাতে কোন প্রকারের ক্রিম লাগাবেন না। শুতে যাবার আগে শুধু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ছাড়াও চকচকে এবং পিচ্ছিল একটা ভাব থাকে কপালে, নাকে এবং থুতনিতে। ত্বকটি নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকের চেয়ে ঘন ,মোটা থাকে।মুখের পোরগুলো বড় থাকে এবং খালি চোখেই দেখা যায়। ব্রন , ব্ল্যাকহেডস ,হোয়াইট হেডস দেখা যায় মুখে। মুখ ধোয়ার কিছু সময় পরেই মুখ তৈলাক্ত হয়ে যায় ।অনেকের আবার নাকের চারপাশে সাদা সাদা চামড়াও থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন ঃ
ত্বক তৈলাক্ত বলে এতো টেনশনেরও কিছু না। তবে হ্যাঁ একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে, এই আর কি! যে কোন প্রকার ত্বকের যত্ন আমরা দুভাবে করতে পারি। এক ঘরে তৈরি জিনিস দিয়ে বা রেডিমেড প্রডাক্ট দিয়ে অথবা দুটি এক সঙ্গে। আমার মনে হয় দুটি এক সঙ্গে ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
রেডিমেড প্রডাক্ট ঃ
তৈলাক্ত ত্বকের প্রসাধনী অবশ্যই হবে অয়েল ফ্রি। তাই যখনই ত্বক সংক্রান্ত যা কিছু কিনবেন তা যেন অয়েল ফ্রি হয়।
ক্লিনজার - ত্বকের যত্নের প্রথম থাপ হল ত্বক পরিষ্কার করা। হাতের জন্য যেমন সাবান প্রয়োজন, তেমনি মুখের জন্য প্রয়োজন ক্লিনজার। আপনার ত্বক যেহেতু তৈলাক্ত তাই প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য একমন ক্লিনজার বাছাই করুন যা যথেষ্ট মৃদু প্রকৃতির হয় পাশাপাশি শক্তিশালীও। যাতে ক্লিনজারটি ত্বকের ময়লা এবং জীবাণু সহজে দূর করতে পারে। তবে আমি বলবো এমন কোন প্রডাক্ট ব্যবহার করবেন না, যা ত্বকের সমস্ত তেল সরিয়ে ফেলে। শুরুতেই বলেছি, ত্বকে কিছুটা তেল ভাব থাকলে ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে এবং সানবার্ন কম হয়।
ফেস মাস্ক - ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বক পরিষ্কারের আরেকটি উপায় হল মাস্ক ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন রকমের ফেস মাস্ক আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল মাস্ক হল মুলতানি মাটি যুক্ত মাস্ক। এই ধরনের মাস্ক পুরু ক্রিমের মতো হয়ে থাকে। ত্বকে লাগালে ঠাণ্ডা অনুভব হয় এবং ত্বক থেকে টক্সিন বের করে আনতে সাহায্য করে।
টোনার - আরেকটি ভালো অপশন হচ্ছে টোনারের ব্যবহার। প্রতিদিন সকালে মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার এর পরিবর্তে কিছুটা টোনার স্পঞ্জ বা তুলো বল এর সাহায্যে ত্বকে প্রয়োগ করুন।
টোনার বাছাই এর ক্ষেত্রে দেখবেন, টোনারে যেনো জলের মাত্রা বেশি থাকে এবং অ্যালকোহল ফ্রি। অনেকেই এই অ্যালকোহল এর উপস্থিতির জন্য টোনার ব্যবহার করতে চান না। তাই Witch hazel যুক্ত টোনারও বেছে নিতে পারেন।
ছেলেরাও Witch hazel টোনার ব্যবহার করতে পারেন আফটার শেভের পরিবর্তে।
ছেলেরাও Witch hazel টোনার ব্যবহার করতে পারেন আফটার শেভের পরিবর্তে।
ময়েশ্চারাইজার - ত্বক তৈলাক্ত বলে অনেকেই ময়েশ্চারাইজার এড়িয়ে যান। আসলে তৈলাক্ত ত্বক ব্যক্তিদের একটি ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার অপরিহার্য। এর কারন হচ্ছে, ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং এর ফলে ত্বক কিছুটা হলেও আর্দ্রতা হারায়। সেই আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনার জন্য ময়েশ্চারাইজার একান্ত প্রয়োজন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভিটামিন ই যুক্ত ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় ক্রিম যুক্ত, কোকো মাখন, যে কোন ধরনের তেল রয়েছে এমন কম্বিনেশন এড়িয়ে যাবেন। পরিবর্তে হালকা, জল বেস, পুদিনা বা তুলসি, শসা, আলভেরা যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
দিনের বেলা এসপিএফ যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেকআপ - তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মেকআপ সামগ্রী পাউডার ও জল বেস হওয়া প্রয়োজন।
তৈলাক্ত ত্বকে সবচেয়ে ভালো পাউডারের ব্যবহার। তাই যখনই বাইরে বের হবেন, তখন মুখে হালকা পাউডার লাগিয়ে নিন। সঙ্গেও রাখুন কম্পেক্ট পাউডার, প্রয়োজনে একবার বুলিয়েও নিতে পারেন।
এছাড়াও ঘাম বা তৈলাক্ততার হাত থেকে রেহাই পেতে মুখে ওয়েটটিসু ব্যবহার করুন। এটি নাকের দুই পাশ এবং গালের দুই পাশ থেকে তৈলাক্ততা কমাতে সাহায্য করে।
টিপসগুলি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন!