গর্ভাবস্থা এক মায়ের জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ সময়। এটি আনন্দের পাশাপাশি চিন্তারও একটা সময়। এই সময় স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরাই দুধের বিকল্প খুঁজেন, বিশেষ করে যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে বা গো দুধ পেতে পছন্দ করেন না। এই পরিস্থিতিতে, বাদাম দুধ একটি দুর্দান্ত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
বাদাম দুধের পুষ্টি উপাদান
বাদাম দুধ গাছের বাদাম, সাধারণত আলমন্ড, জল, এবং কিছু পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ দিয়ে তৈরি। এটি কম ক্যালোরিযুক্ত, কোলেস্টেরল মুক্ত, এবং ল্যাকটোজ-মুক্ত। তবে, ব্রান্ডের উপর নির্ভর করে এর পুষ্টিগুণের মান পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, একটি কাপ (240 মিলিলিটার) unsweetened বাদাম দুধে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে:
ক্যালোরি: 30-40
প্রোটিন: 1 গ্রাম
চর্বি: 2.5 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: 3 গ্রাম
ক্যালসিয়াম: 300-500 মিলিগ্রাম (যদি দুধটি দৃঢ়ীভূত করা হয়)
ভিটামিন ই: 5 মিলিগ্রাম
গর্ভাবস্থায় বাদাম দুধের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাদাম দুধ সীমিত পরিমাণে পান করা নিরাপদ এবং এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা প্রদান করতে পারে:
ল্যাকটোজ-মুক্ত বিকল্প: যদি আপনি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হন বা গো দুধ পেতে না চান, তাহলে বাদাম দুধ আপনার জন্য দুধের একটি দুর্দান্ত বিকল্প। এটি আপনাকে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D সহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে পারে, যা আপনার এবং আপনার বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য: কিছু ব্রান্ডের বাদাম দুধ ক্যালসিয়াম দিয়ে দৃঢ়ীভূত করা হয়, যা শিশুর হাড়ের গঠনে এবং আপনার নিজের হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম দুধ কম ক্যালোরিযুক্ত এবং চর্বি কম, তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে বাদাম গ্রহণ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাদাম দুধে থাকা সামান্য পরিমাণের বাদাম থেকে এই উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। তবে, আরও গবেষণা প্রয়োজন।
কোলেস্টেরল কমায়: বাদাম দুধ কোলেস্টেরল মুক্ত, তাই এটি আপনার মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। বাদাম দুধ লেশাল থাকে, যা পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাদাম দুধ পান করার আগে মনে রাখার কথা
যদিও বাদাম দুধ গর্ভাবস্থায় পান করা নিরাপদ, তবে এটি গো দুধের সমস্ত পুষ্টি উপাদানের একটি সম্পূর্ণ বিকল্প নয়। গো দুধ প্রোটিন, ভিটামিন বি 12, এবং আয়োডিনের একটি ভালো উৎস।
এখানে গর্ভাবস্থায় বাদাম দুধ পান করার আগে মনে রাখার কিছু বিষয় দেওয়া হল:
চিনিযুক্ত বাদাম দুধ এড়িয়ে চলুন: কিছু ব্রান্ডের বাদাম দুধে চিনি যোগ করা থাকে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
দৃঢ়ীভূত বাদাম দুধ বেছে নিন: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য দৃঢ়ীভূত বাদাম দুধ বেছে নিন।
অন্যান্য উৎস থেকে পুষ্টি উপাদান পান: বাদাম দুধ প্রোটিন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের কম উৎস। মাংস, মাছ, ডিম, এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো খাবার থেকে এই পুষ্টি উপাদানগুলি পাওয়া গেলে ভালো।
সীমিত পরিমাণে পান করুন: বেশি পরিমাণে বাদাম দুধ পান করা আপনার শরীরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের শোষণে বাধা দিতে পারে।
আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন: গর্ভাবস্থায় কোনো নতুন খাবার খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা ভালো।
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম দুধ ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণু মায়েদের বা গো দুধ পছন্দ না করলে তাদের জন্য দুধের একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে। তবে, এটি গো দুধের সম্পূর্ণ বিকল্প নয়। সীমিত পরিমাণে দৃঢ়ীভূত, চিনি-মুক্ত বাদাম দুধ পান করুন এবং অন্যান্য খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
0 মন্তব্যসমূহ