আপনার বাড়ির আঙ্গিনার এক কোণে বা টবে চাষ করতে পারেন পুষ্টিকর সালাড জাতীয় সবজি লেটুস। শাকসবজি উৎপাদনের জন্য একখণ্ড জমি না থাকলে বাসাবাড়ির ছাদে বা বারান্দায় টবে, মাটির চাড়িতে, ড্রামে বা কাঠের বাক্সে অনায়াসেই লেটুস চাষ করতে পারবেন। লেটুস পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। এ ছাড়াও লেটুস পুষ্টিকর সালাদ জাতীয় সবজি, কাজেই সুষম খাদ্যের জন্য এটা বেশ প্রয়োজনীয়। চাষপদ্ধতি সহজ ও চারা লাগানোর মাত্র এক মাসের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।
চারা রোপণের সময় ও প্রাপ্তিস্থান
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন নার্সারি থেকে ১০ টাকার পলিব্যাগে একটি চারা অথবা ৩০০ টাকায় এক হাজার বীজ কিনতে পারবেন।
মাটি তৈরি
মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। জল শুকিয়ে গেলে টবের মাটি যেন ফেটে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিমাণমতো মাটি ও গোবর অথবা রাসায়নিক সার মিশিয়ে ভালোভাবে ড্রেসিং করতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈবসার একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈবসারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও পাঁচ-ছয় দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
বীজ বপন
মাটি নরম থাকা অবস্থায় বীজগুলো ছিটিয়ে নিয়মিত জল দিন। চারার চার-পাঁচটি পাতা গজালে টবে লাগানোর উপযুক্ত হবে। পড়ন্ত বিকেলে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয়, যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়। চারা লাগানোর পর তিন থেকে চার দিন ঢাকনা দিয়ে চারাকে রোদবৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে ও সকাল-বিকেল চারার গোড়ায় জল দিতে হবে।
রোগবালাই
লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়াও লেটুস পাতায় জাবপোকার ভয়ঙ্কর আক্রমণ দেখা যায়। জাবপোকা গাছের পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলে। পোকার সংখ্যা কম হলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে পারেন। আক্রমণ ভয়াবহ হলে কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটানোর ৭-১০ দিনের মধ্য লেটুস পাতা খাওয়া উচিত নয়। গোড়া পচা, আগা পোড়া দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে।
পরিচর্যা
মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া জরুরি। আবার জল জমে থাকলে সাথে সাথে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। চারা পাতলা করে রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। টবে চারা লাগানোর পরপরই অনেক সময় দেখা যায় চড়াই, শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা ও ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সে ক্ষেত্রে দু-চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতোভাবে টবটি ঢেকে রাখতে পারেন।
কিভাবে টব তৈরি করবেন নীচে ছবির মাধ্যমে দেখানো হল।