চোখে মেকআপ ব্যবহার করুন সাবধানে

চোখ শরীরের সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং সংবেদনশীল অঙ্গ।  আমরা এই চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ব্যহার করি বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয় কাজল। আরও যে প্রসাধনী রয়েছে তার মধ্যে মাস্কারা, আইলাইনার, আইসেডো ইত্যাদি। কিন্তু এই ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের আগে কি আমরা একবারও ভাবি যে এর ব্যবহার  আমাদের চোখ ক্ষতি করতে পারে? আমরা চোখের মেকআপের জন্য যতই নামীদামী ব্র্যান্ড ব্যবহার করি না কেন কোনটাই কিন্তু বিপদমুক্ত নয়।তাই চোখের মেকআপ করার আগে অবশ্যই সাবধান থাকুন। 

প্রাচীনকাল থেকেই নারী-পুরুষ উভয়েই কাজল ব্যবহার করতেন। তখন বিশ্বাস ছিল যে কাজল তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করবে। দেখা গেছে যে প্রাচীন মিশরীয়রা সীসা বা সালফাইড এর সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে সুর্মা বা কাজল তৈরি করতো। দক্ষিণ এশিয়ার একটি পিতলের পাত্রকে জ্বলন্ত লম্প বা ল্যাম্পের শিখার উপর ধরে রাখা হতো। পিতলের পাত্রের মধ্যে যে কালো প্রলেপ পড়তো তার সঙ্গে তেল মিশিয়ে সেটি একটি ছোট বাক্সে সংরক্ষণ করা হতো। যা পরে কাজল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আজও বিভিন্ন স্থানে এই ভাবে কাজল তৈরি করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনের কাজল পোড়া কার্বন ছাড়া আর কিছুই না। যা সংবেদনশীল চোখের জন্য একেবারেই প্রযোজ্য নয়।

আমাদের দেশে দেখছি নবজাতকের  চোখে কাজল প্রয়োগ করার পদ্ধতি সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এখনো এর চল রয়েছে। শিশুর চোখে এই কাজল লাগানোর অর্থ ছিল আত্মীয় এবং বন্ধুদের কুনজর থেকে রক্ষা করা। এছাড়া এমনও বলতে শুনেছি যে শিশুর চোখ, উজ্জ্বল বড় এবং আকর্ষণীয় করতে নাকি কাজল বা সুরমা ব্যবহার করা হয়। আদতেও যে এই কথার কতটা সত্যতা রয়েছে এর কিন্তু কোন প্রমান এখনো পাওয়া যায় নি।

আধুনিকে কালের তন্বীদের মধ্যে চোখের মেকআপ করার প্রবনতা খুব বেড়েছে। অনেকটা এক জন্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলি দায়ি বলেই আমার মনে হয়। চোখকে আকর্ষণীয়, মায়াবী ও সুন্দর করে তুলতে কত ধরনের মেকআপ সামগ্রী যে এখন বাজারে পাওয়া যায়, তার কোন
শেষ নেই।এর মধ্যে কাজল এরই ব্যবহারই সব থেকে বেশি। কাজল থেকে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে থাকে। অনেকেই হয় তো দেখেছেন যে কাজল লাগানোর পর চোখ একটু লাল হয়ে যায়। এটা কিন্তু হওয়ার কথা নয়। যদি এমনটি হয় তাহলে বুঝতে হবে কাজল টি আপনাকে সুট করছে না। তখনই কাজলটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। তাছাড়া অনেক সময় দেখা গেছে যে কাজল চোখের এলার্জির কারণও বটে। মাস্কারা, আইলাইনার, আইসেডো ব্যবহার থেকে যদি চুলকানির সমস্যা হয় তাহলেও বুঝতে হবে প্রডাক্টটি আপনার জন্য সঠিক নয়। মাস্কারা আমরা চোখের পাতা ঘন দেখানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই মাস্কারা থেকে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হয়ে অনেকেই পাতা ঝরে গেছে।

এছাড়া আজকাল বিউটি ব্র্যান্ড এমন কাজল বা মাস্কারা কথা বলে বেড়ায় যা নাকি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে বলে কাস্টমারের মনে দীর্ঘ বিশ্বাস তৈরি করে। কিন্তু  বিশেষজ্ঞরা তা মনে করেন না। তাদের মত এই বিষয়ে একটু অন্য রকম। আসলে কাজল ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি করা জন্যই বিউটি ব্র্যান্ড এই ধরনের প্রচার করে থাকে।

চোখের মেকআপ বিষয়ের আরও কিছু তথ্য আপনার জানা দরকার।

প্রসাধনী তৈরীর জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। তাদের অধিকাংশই আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকারী বিশেষ করে এতে কিছু উপাদান আছে যা চোখে  ক্ষতিকারী প্রভাব ফেলতে পারে।সাধারণভাবে ব্যবহৃত চোখের প্রসাধনীর অন্তর্ভুক্ত হল - মাস্কারা, আইলাইনার (তরল এবং পেন্সিল),  আইশেডো এবং কাজল বা সুর্মা।   US পণ্য উৎপাদানের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম অবলম্বন করে। যেকোন প্রসাধনীতে একটি নিদিষ্ট মাত্রায় কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়। এবং  লেবেলে একটি পণ্যের উপাদানের ও তার মাত্রার উল্লেখ রাখাও কঠোর নিয়ম রয়েছে। ভারতে এই বিষয়ে ততটা কঠোরতা নেই। প্রসাধনী  ড্রাগস এবং প্রসাধনী আইনের ১৯৪০ এবং  ১৯৪৫ এর বিধি অনুযায়ী বলা হয়েছে যে কঠিন বস্তুর এবং সামান্য কঠিন বস্তুর (semisolids ) যদি ৩০গ্রামের নীচে হয় এবং তরল যদি  ৬০ মিলির কম হয় তাহলে লেবেলের গায়ে উপাদানের বা তার মাত্রা উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন নেই। চোখের প্রসাধনী সাধারণত ছোট প্যাক আসে। এই নিয়মের ফলে চোখের প্রসাধনীতে কি ধরণের উপাদানের ব্যবহার করা হয়েছে তা আমরা যাচাই করতে পারিনা। কম্পোজিশন না দেখে কিনলে একটা ভয় সব সময়ই মনে কাজ করে। কারন চোখের প্রসাধনীতে ব্যবহার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।

তাহলে কি একেবারেই চোখের মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না? সে কথা নয়। অবশ্যই মেকআপ ব্যবহার করুন, তবে ট্রাই করুন তা যেন কেমিক্যাল ফ্রি হয়। চোখের মেকআপ সামগ্রী যেন প্রাকৃতিক হয়।  আরও পড়ুন কিভাবে ডার্ক সার্কল তাড়াবেন

আজকাল বাজারে বিভিন্ন কেমিক্যাল ফ্রি বা প্রাকৃতিক মেকআপ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। আপনি তা ব্যবহার করে দেখুন এবং তাতে আপনার চোখের ক্ষতি হচ্ছে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। কিন্তু সতর্কতার একটি শব্দ আমাকে বলতেই হবে,  অন্ধভাবে কোন ভেষজ পণ্যকে বিশ্বাস করবেন না। কোন কোম্পানী এবং তারা যে উপাদানগুলো ব্যবহার করছে  তার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। কোন একটি ব্র্যান্ডের প্রতি যদি আপনি বিশ্বাস থাকে তাহলে সেই ব্র্যান্ডের পণ্যই ব্যবহার করুন। আর একটা অবশ্যই পালনীয় বিষয় যে কোন পণ্যেরই মেয়াদের শেষ হওয়ার তারিখ দেখে কিনুন। যদি মেয়াদের তারিখ অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে সেই প্রসাধনী ব্যবহার না কারাই ভালো। শুধুমাত্র আপনার চোখের সুরক্ষার জন্যই এই কাজটি করতে হবে।

সহজ টিপস

চোখের মেকআপ প্রথম নিয়ম হল কাজল বা অন্য সামগ্রী  কোন অন্য  ব্যক্তি এমনকি আপনার সেরা বন্ধু বা বোনের সাথেও সেয়ার করবেন না। কারন চোখে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ খুব সহজেই হয় থাকে।
যদি আপনি লেন্স পরেন তাহলে বিশেষ করে চোখের ভিতরের অংশে কোন কিছু প্রয়োগ না করাই ভালো।

চোখের সংক্রমণ কোন রকমের সমস্যা থাকলে কোন মেকআপ প্রয়োগ করবেন না।  মেকআপ প্রয়োগের ফলে আরও সংক্রমণ বেড়ে যাবে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ অতিক্রম হয়ে গেছে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।

সব সময় দিনের শেষে অর্থাৎ রাতে মেকআপ তুলে ফেলুন।

সংক্রমণের  সুযোগ এড়াতে ব্যবহারের পর প্রসাধনী ক্যাপ লাগাতে ভুলবেন না।

মেকআপ করার সময় চোখ লাল হয়ে গেলে বা irritate হলে এর ব্যবহার বন্ধ করুন।

চোখের মেকআপ কখনই চলন্ত গাড়ির মধ্যে করবেন না।  

নতুন কোন প্রডাক্ট ব্যবহারের আগে ফ্রেন্ড সার্কেলে যদি কেউ ব্যবহার করে থেকে, তবে তার থেকে রিভিউটা অবশ্যই জেনে নিন।

অনেকটা কথা শিশুদের কুনজর থেকে রক্ষা করতে হলে, চোখে নয়, কাজলের নজর টিকা মাথায় বা পায়ের নীচে লাগিয়ে দিন।

আপনার চোখের ক্ষতি এড়াতে এই সহজ টিপসগুলি অনুসরণ করুন।এবং সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপদের ব্যবহার করুন চোখের প্রসাধনী। আর বিশ্বের সৌন্দর্যকে উপভোগ করুন।
take care

Follow Me on PinterestFacebook এর আমাদের সঙ্গে থাকুন।


তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে :
thehealthsite.com
ncbi.nlm.nih.gov
deccanherald.com