আমাদের
প্রকৃতি তার অফুরন্ত সম্পদ নিয়ে স্বয়ং সম্পূর্ন। তাই তো সেই প্রাচীন কাল থেকে
আজকের এই আধুনিক যুগের মানুষ এই সম্পদকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে আসছেন মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে
বিভিন্ন ধরনের
জড়ীভূটি, ঔষধি, তেল, বিভিন্ন
ধরনের ফুল ফলকে নানা ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে এই ধরনের সম্পদের
বেশি ও বহুল ব্যবহার প্রসাধনী সামগ্রীতে ও ঔষধ তৈরির কাজেই করা হয়।
প্রকৃতির
এই ভাণ্ডারে এক জাদুকারি সম্পদ হল অলিভ তেল। ৫ হাজার বছর আগে এই তেলটির আবিষ্কার
হয়। বলা হয় যে রানী ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য চর্চার ভাণ্ডারের একটি অন্যতম উপাদান
ছিল অলিভ অয়েল। সেই সময়ে এত দামী দামী মশ্চারাইজার, ফেস ক্লিঞ্জার ছিলো না। তখন বিশুদ্ধ অলিভ অয়েলই ছিলো
রূপচর্চার অন্যতম উপাদান। অলিভ
অয়েলকে ‘তরল সোনা’ বলে আখ্যায়িতও করা হয়েছিলো।
বিভিন্ন
ধরনের জলপাই তেল
প্রেস
করে তেল প্রস্তুত করা হয়। এই প্রস্তুত পদ্ধতির কৌশলের মাধ্যমে প্রাপ্তের উপর
নির্ভর করে জলপাই তেল বিভিন্ন ধরনের হয়ে
থাকে। তবে সব থেকে বেশি প্রচলিত হল extra virgin olive
oil যার মধ্যে ওপর 0.৮% অম্লতা থাকতে পারে, এবং দ্বিতীয় প্রকার হলও virgin olive oil যার
মধ্যে প্রায় ২% অম্লতা
থাকতে পারে।প্রথম প্রেস থেকে প্রাপ্ত তেলকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা
হয়।
আজ ভূমধ্যসাগরীয়
অঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হিসাবে এর কদর আছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ঘর-গৃহস্থালির
জিনিসপত্র পরিষ্কার করার কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে অলিভ অয়েল। অনেক গুণের অধিকারী এই
অলিভ অয়েল সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। অলিভ
অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক কে সজীব করে এবং
পরিষ্কার করে। সূর্য রশ্মির ক্ষতির থেকেও ত্বককে রক্ষা করে অলিভ অয়েল।অলিভ অয়েল
ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি
এসিডে ভরপুর তাই শুধু হার্টের জন্য নয় পুরো মানব দেহের জন্যই উপকারী। এটি
সেনসিটিভ স্কিনের জন্যও নিরাপদ। অলিভ অয়েল চুলে পুষ্টি যোগায় আর অলিভ অয়েলে
বিদ্যমান ভিটামিন ই এবং এ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আজকাল বিভিন্ন কসমেটিকস কোম্পানিও অলিভ অয়েলের গুণের
কথা মাথায় রেখে তাদের প্রসাধনী সামগ্রীতে এই তেলের ব্যবহার করছেন। তাহলে চলুন এই
উপকারি তেলের কিছু রহস্য খুঁজে বার করি।
স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত ব্যবহার
ডায়াবেটিস
:
ডায়াবেটিস
এমন একটি রোগ যার জন্য ওষুধের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্যভ্যাস এবং
জীবনচর্চা নিয়ন্ত্রণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেসব মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি আছে, তাদের
অনেক সময়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু খাদ্যভ্যাস একটু
নিয়ন্ত্রণ করলেই এই ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। এ
ক্ষেত্রে অলিভ তেলের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এমন
কেমিক্যালস রয়েছে অলিভ তেল। এটি শরীরে ইনসুলিন হিসাবে কাজ করে। টাইপ
টু ডায়াবেটিস হবার ভয়
যাদের আছে অলিভ তেলের ব্যবহার তা অনেকটাই কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।টাইপ টু ডায়াবেটিস ঝুঁকি হ্রাস পায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি
কমাতে :
অলিভ
অয়েল অলেইক অ্যাসিড নামক মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ আর এই
আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড LDL বা
খারাপ কোলেস্টেরলের লেভেল কমায় এবং HKL বা
ভালো কোলেস্টেরলের লেভেল অপরিবর্তিত রাখে। এ ছাড়াও LDL (খারাপ
কোলেস্টেরল)-এর অক্সিডেশনহ্রাস
করে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের অক্সিডেশনের ফলে রক্তনালীতে এর আস্তরণ তৈরি হয় এবং
রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। ফলে হৃৎপিণ্ডসহ মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত
হয়, যার
ফলস্বরূপ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক ঘটতে পারে। অলিভ অয়েল
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় LDL (খারাপ
কোলেস্টেরল)-এর অক্সিডেশন হ্রাস করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
অতিপ্রয়োজনীয়
ফ্যাটি অ্যাসিডের ভারসাম্য রক্ষায় :
ওমেগা-৩
ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড উভয়ই অতিপ্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের
অন্তর্ভুক্ত, যা
আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না এবং খাবারের মাধ্যমেই এদের চাহিদা মেটাতে হয়।
প্রায় সব রকমের খাবারেই এটি পাওয়া যায় কিন’ তেলজাতীয় খাবারে এর পরিমাণ বেশি থাকে। আদর্শ খাবারে
এদের অনুপাত সমান হওয়া উচিত এবং কোনো খাবারে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যদি ওমেগা-৩
ফ্যাটি অ্যাসিডের চার গুণ হয় তবে এটা হবে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা। কিন’ দেখা
গেছে, বর্তমানে
আমরা যেসব খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি তাতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও
ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত থাকে ১:৪০। এই ভয়াবহ রকমের ভারসাম্যহীনতাই
ডায়াবেটিস, আলঝেইমার্স, পার্কিনসন্স, বুদ্ধি
ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, ধীর
মানবিক বিকাশ, হাড়ক্ষয়, পাথর
তৈরিসহ নানাবিধ জটিল রোগের জন্য দায়ী। অলিভ অয়েল সাধারণত ওমেগা-৯ ফ্যাটি
অ্যাসিডসমৃদ্ধ এক অসাধারণ ভোজ্যতেল যেখানে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬-এর ভারসাম্য বজায়
থাকে।
ক্যান্সার
প্রতিরোধে :
ভিটামিন ‘ই’ ছাড়াও অলিভ
অয়েলের ফেনলিক যৌগসমূহ কার্যকর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ফ্রির্যাডিকেলের
ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রতিহত করে এবং বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার (স্কিন ক্যান্সার স্তন, জরায়ু, প্রোস্টেট ও মলাশয়ের ক্যান্সার) প্রতিরোধ করে। স্পেনিশ
গবেষকদের মতে, খাদ্যতালিকায় জয়তুন তেল থাকলে তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধ করে।
ভোজ্যতেল হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে দক্ষিণ ইউরোপের বাসিন্দারা উত্তর
ইউরোপের বাসিন্দা অপেক্ষা স্তন, জরায়ু ও প্রোস্টেট ক্যান্সারে
তুলনামূলকভাবে কম আক্রান্ত হয়ে থাকে।
উচ্চরক্তচাপ
কমাতে :
অলিভ অয়েলের
পলিফেনলিক যৌগসমূহ রক্তনালীকে প্রসারিত করার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমায়
ওজন কমাতে :
গবেষণায় আরো দেখা গেছে শরীরের মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে অলিভ অয়েল অদ্বিতীয়।
মাথাব্যথায় :
ওজন কমাতে :
গবেষণায় আরো দেখা গেছে শরীরের মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে অলিভ অয়েল অদ্বিতীয়।
মাথাব্যথায় :
অলিভ
অয়েল প্রদাহনাশক হিসেবে মাথা যন্ত্রণায় কার্যকর। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বা
সালাদে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে অনবরত মাথাব্যথা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।
আধুনিক গবেষণায় বলা হয় যে, অনেক
সময় মলাশয়ে সঞ্চিত মল মাথাব্যথার সৃষ্টি করে। অলিভ অয়েল ব্যবহার সঞ্চিত মল দেহ
হতে বের করে দেয়। এ ছাড়াও অলিভ অয়েলে বিদ্যমান প্রাকৃতিক অলিওক্যানথাল নামক
উপাদানটি প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থকে বাধা দেয়ার মাধ্যমে আমাদের মাথাব্যথা থেকে
অব্যাহতি দেয়। এটা বাজারের অন্যান্য ব্যথানিবারক ওষুধের মতো নয়, বরং
পাকস্থলীর পক্ষে ঝুঁকিমুক্ত।
বাত:
অলিভ তেল অস্টিওআর্থারাইটিস এবং গাঁট - ফোলানো বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এছাড়া অলিভ তেল ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং হার্টকে ইয়ং রাখতে সাহায্য করে।। ক্রমশ ...
অলিভ তেল অস্টিওআর্থারাইটিস এবং গাঁট - ফোলানো বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এছাড়া অলিভ তেল ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং হার্টকে ইয়ং রাখতে সাহায্য করে।। ক্রমশ ...