অলিভ তেলের জাদুকারি ব্যবহারের আগের পর্বে আমি এই তেলের স্বাস্থ্যকারী ব্যবহারের দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। ডায়াবেটিস,হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ক্যান্সার প্রতিরোধে,ওজন কমাতে বাত সারানোর মতো বিভিন্ন সমস্যাগুলি সমাধানে অলিভ তেল জাদুর মতো কাজ করে। আজকের পর্বে এই তেল কিভাবে রূপচর্চায় ব্যবহার করা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো। এতো দিন ধরে যারা আমার এই ব্লগ ফলো করে আসছেন তাঁরা নিশ্চয় দেখেছেন যে আমি রূপচর্চার বিভিন্ন প্যাকে অলিভ তেলই বেশি ব্যবহার করি।
ঠোঁটের যত্নে অলিভ অয়েলঃ
খুব বেশি কসমেটিকস বা সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে আপনার নরম কোমল ঠোঁট তার কোমলতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে আসে, হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা। তাই নিয়ম করে যদি অল্প অলিভ অয়েল ঠোঁটে বুলিয়ে নেয়া যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। এছাড়াও অলিভ অয়েল দিয়ে স্ক্রাবার বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। আরও পড়ুন - জলপাই তেল দিয়ে তৈরি ঠোঁটের স্ক্রাবার
নখের ভঙ্গুরতা রোধঃ
তেলটিকে হালকা গরম করে নিন তারপর নখ গুলো ডুবিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট। তারপর দেখুন আপনার নখ গুলো কেমন শাইন দিচ্ছে আর এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে নখগুলো শক্তও হয়ে যাবে। এছাড়াও প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অলিভ ওয়েল ম্যাসাজ করে নিন নখে ও এর আশে পাশের ত্বকে। ধীরে ধীরে নখ ভাঙ্গার প্রবণতা কমে যাবে এবং নখ হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
চুলের যত্নঃ
ফ্রিজি চুলের সমাধান – একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে নিন তারপর ফ্রিজি চুলে আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
হেয়ার কন্ডিশনার – শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর চুলে কন্ডিশনারের বদলে লাগিয়ে ফেলুন।
ডিপ কন্ডিশন – সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান। এভাবে ২/৩ ঘণ্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।
খুশকি থেকে মুক্তি – সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদাম তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
হেয়ার মাস্ক – একটি ডিমের কুসুমের সাথে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ৫ ফোঁটা লেবুর রস মেশান। চুলে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম আর উজ্জ্বল।
নতুন চুল গজানো – মাথায় অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে গরম জলে ডুবানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন তাপমাত্রা যেন সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এভাবে ৪ বার করুন।
অলিভ অয়েল মুখের যত্নঃ
মাস্ক – একটি ডিমের কুসুমের সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আর ৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম জল তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ময়েশচারাইজার – আমি রোজ রাতে ঘুমানোর আসে অলিভ অয়েলেই লাগিয়ে ঘুমাই। অলিভ অয়েল খুব ভালো ময়েশচারাইজার হিসেবে কাজ করে।
রোদে পোড়া দাগ – অভিল অয়েল ভিটামিন এ এবং ই রয়েছে। তাই নিয়মিত অলিভ অয়েল মাসাজ করুন রোদে পোড়া দাগের উপরে। সান টান অনেকটাই কমে যাবে।
মেক-আপ রিমুভারঃ
অলিভ অয়েল দারুণ মেক-আপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে। আমি সাধারণত ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ তোলার জন্য Lakme Absolute Bi Phased Makeup Remover ব্যবহার করি। তবুও আমার বেস্ট মেকআপ রিমুভার অলিভ তেল। আমি আঙুলের ডগায় অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিয়ে সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে মাসাজ করে সমস্ত মেক-আপ তুলে নেই। তার পর জলে ভিজিয়ে তুলার প্যাড দিয়ে বাকি তেলটুকু তুলেনেই। চাইলে আপনি ক্লিনজার দিয়েও শেষ কাজটা করতে পারেন। চোখের মেকআপ তোলার ক্ষেত্রেও সেই একই ভাবে অলিভ তেল আমি ব্যবহার করি।
আই ক্রিমঃ
অলিভ অয়েল খুব ভালো আই ক্রিম হিসেবেও কাজ করে। চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আর নরম করে তোলে। এতে যেমন বলিরেখা দূর হয় তেমনি দূর হয় চোখের কালো দাগ। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার রিং ফিঙ্গার দিয়ে আলতো হাতে অলিভ অয়েল বুলিয়ে নিন। রোজ করুন। ১ মাসের মধ্যে অবশ্যই তফাৎ তা বুঝতে পারবেন।
সুন্দর হাত-পা
যাদের হাত ও পায়ের ত্বক সুন্দর টান টান না এবং একটু কালচে তাঁরা প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতে পায়ে অলিভ ওয়েল মেখে নিন। আর যাদের পা ফাটা সমস্যার রয়েছে তাদের অবশ্যই সাজেস্ট করবো যে পায়ে অলিভ অয়েল ভালো করে ম্যাসাজ করে মোজা পড়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। নিয়মিত এভাবে অলিভ অয়েল লাগিয়ে ঘুমালে হাত পায়ের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। আরেকটা কাজ করতে পারেন স্নানের আগে অলিভ তেলের বডি স্ক্রাবার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে হাত ও পা যেমন সুন্দর থাকবে তেমনি শরীরের ত্বকের মধ্যেও আসবে একটা আলাদা জেল্লা। এছাড়াও অলিভ অয়েলকে ব্যবহার করতে পারেন বডি লোশন হিসেবে।
যাদের ব্রণ হওয়ার সমস্যা আছে তাঁরা হয় তো ভাবছেন যে ব্রণের সমস্যায় কি করে এই তেল ব্যবহার করবেন ? তাই তো ? আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অলিভ তেল ব্রণের মধ্যেও লাগানো যায়। আমি মুখে পিম্পল থাকা সত্যেও অলিভ তেল লাগাই, এবং তা কমেও যায়। তবে তন্বীদের বলবো বিশেষ করে যাদের ব্রণ হয়, তাঁরা যদি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে প্লিজ আমাকে জানাবেন যে আপনার ত্বকে এর রেজাল্টটা কি।
লেখাটি ভালো লাগলে লাইক ও সেয়ার করুন