ত্বকের একটি খুব স্বাভাবিক অবস্থা হচ্ছে শুষ্কতা। ত্বকের উপরের স্তরে ( epidermis) উপযুক্ত পরিমাণে জলের অভাবের দরুন ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠে। ত্বকের শুষ্কতা শুধু নারীদের সমস্যা নয় এটি সমানভাবে পুরুষদেরও প্রভাবিত করে থাকে। ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠলে বৃদ্ধ ব্যক্তি মতো চামড়া দেখায়।শুষ্ক ত্বকে উজ্জ্বলতা থাকেনা। মনে হয় প্রাণহীন। অনেক সময় দেখা যায় শুকনো চামড়ার সমস্যা কয়েক দিন জন্য হয়, যেমন আবহাওয়া পরিবর্তন, বা কম জল খেলেন ইত্যাদি। কিন্তু সঠিক সময়ে এই ধরনের ত্বকের যত্ন না নিলে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দীর্ঘমেয়াদী চামড়ার সমস্যার রূপ নিতে পারে।
শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ
শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক
শুষ্ক ত্বকের প্রাথমিক লক্ষণ হল চামড়া টান এবং চুলকানি থেকে অস্বস্তি বোধ। আবহাওয়া প্রভাব শুষ্ক ত্বকের উপরে খুব বেশি। যেমন, ঠান্ডা বা শুষ্ক হাওয়া এবং শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক ত্বকে আরও বেশি খারাপ করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের দরুন ব্যাক্তি ঘন ঘন হাত বা মুখ ধুয়ে থাকেন। যা ত্বককে আরও বেশি প্রভাবিত করে থাকে। শুকনো চামড়ার কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একটি উপসর্গ হতে পারে। পায়ের গোড়ালি ফাটাও একটা লক্ষণ।
কি ভাবে যত্ন নেবেন
অনেকের আবার সারা বছর ত্বক শুষ্ক থাকে না। শীতকালেই শুধু ত্বক শুষ্ক থাকে। আবার কারও কারও সারা বছর এই সমস্যা থাকে। তবে নিয়মিত যত্ন নিলে শুষ্ক ত্বকও হয়ে উঠবে লাবণ্যময়। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরে পেতে সচেতন হয়ে উঠা খুব জরুরি।
স্নানের সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, স্নানের জল যেন খুব গরম বা ঠাণ্ডা না হয়। শরীরের তাপমাত্রা সঙ্গে জলের তাপমাত্রা যেন এক থাকে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম জল ত্বকের স্বাভাবিক তেল নষ্ট করে দেয়।
রোজ রোজ ত্বকে সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। সাবানের বদলে উপ্টন ব্যবহার করুন। আর যে সাবান ব্যবহার করবেন তা যেন ক্ষারযুক্ত না হয়।
স্নানের পর টাওয়াল দিয়ে ঘষে ঘষে শরীরের বারতি জল না শুকিয়ে টাওয়ালটি আলতো করে শরীরে চেপে চেপে ধরুন। এতে জল তো শুকিয়ে যাবে পাশাপাশি শরীরের আদ্রতাও বজায় থাকবে।
এবার বডি লোসন লাগান। Hyaluronic acid, mineral oil, petroleum jelly এর মতো উপাদানগুলি বডি লোসনে আছে কিনা দেখে নেবেন।
ত্বককে বাইরে থেকে কিছু আলাদা খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, যেমন মাছ তেল প্রধানত কড লিভার তেলে ওমেগা 3 অ্যাসিড থাকার কারণে, শীতকালে এই তেল শুষ্ক ত্বককে নরম রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে। তাই সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার কড লিভার তেল করুন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের বিষয় যত্ন প্রয়োজন। বিশেষ করে শীতকালে যখনই বাইরে বের হবেন, হাতে গ্লাভস ও পায়ে মোজা পরতে ভুলবেন না।
ঠোঁটের জন্য ঘরে তৈরি স্ক্রাবার বানিয়ে লাগান। চিনি ও লেবু দিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে সপ্তাহে তিন দিন স্ক্রাব করতে পারেন। ভালো ব্র্যান্ডের লিপ বাম সব সময় সঙ্গে রাখুন।
দিনে দু-তিনবার অধিক ময়েশ্চারাইজারযুক্ত কোনো ক্রিম ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা বেশি বোঝা যায় এবং অতিরিক্ত শুষ্কতার জন্য ত্বক তার স্বাভাবিক লাবণ্য হারায়। শুষ্কতা এড়াতে অবশ্যই ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে সব সময়। যতবার মুখ ধোবেন ততবারই লাগাতে হবে ময়েশ্চারাইজার। রাতে কিছুটা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকে wrinkles খুব বেশি থাকে। সূর্যের আলো এতে আরো ক্ষতি করে। সুতরাং, আপনার ত্বককে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে পারেন এমন একটি ভাল sunscreen নির্বাচন করুন। sunscreen SPF যুক্ত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দিনে ৩ লিটার জল পান করুন। এতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য ফিরে আসবে।
ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে হারবাল ফেসিয়াল ছাড়াও বিভিন্ন বিউটি ফেসিয়াল করাতে পারেন।
এছাড়া ঘরে তৈরি প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন।
একাট পাকা কলা চটকে তার সঙ্গে এক টেবল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে প্যাক হিসেবে লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন। এর ফলে ত্বকের শুষ্কতা ঝটপট চলে যায়।
একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে বেশ খানিকটা দুধের সর, একটু মসুরের ডাল বাটা ও একটু মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন এ প্যাক ব্যবহারে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব কমে যাবে।
এক টেব্ল চামচ দুধের সরের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল ও এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটা প্যাক বানাবেন। এই প্যাক মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
এ ছাড়া কাঁচা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়েও প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পার। এর ফলে ত্বক ময়শ্চারাইজ় হবে এবং ত্বকের জেল্লাও বাড়বে।
শীতে পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যাও বেড়ে যায়। যাঁদের ত্বক একটু রুক্ষ, তাঁদের গোড়ালি ফাটার সমস্যার সমাধানে কিছু পরামর্শ।
> নিয়মিত পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করুন।
> গোড়ালির মৃতকোষ ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
> পায়ের গোড়ালি নরম রাখতে গ্লিসারিন বা কিছুটা তৈলাক্ত কোনো লোশন লাগাতে পারেন।