৩৭ বছর বয়সেও সংগীতাদিকে দেখলে মনে হয় যেন সদ্য কলেজ পাশ করেছে। কে বলবে যে তাঁর ২০ বছরের মেয়ে আছে? চুলে লেয়ার কাট। একটা ব্রাউনিন্স আভাও চোখে পড়ে। মুখের চামড়া টানটান। এর রহস্যটা কি ? সংগীতাদি আমার পাশের বাড়ির একজন মহিলা। খুব সুন্দরী। সংগীতাদিকে দেখলে মনে হয়, বয়স ধরে রাখার কি তাহলে সত্যি কোন গোপন রহস্য আছে? আগে যেখানে মেয়েদের বলা হতো কুড়িতেই বুড়ি, আর এখন ৪০ পার করলেও বোঝা উপায় নেই। কি করেই বা বোঝা যাবে। সংগীতার মতো আজ অনেক নারীই নিজের বয়স ধরে রাখতে পারেন। বয়স বাড়লে এর প্রভাব প্রথমেই ত্বকের উপরে পরবে । আর এটাই স্বাভাবিক। চোখের তলায় ভাঁজ, কালো দাগ। বলিরেখা, নির্জীব ত্বক এসবই বয়সের ছাপের লক্ষণ। তবে প্রতিদিন যদি কিছু
জিনিস আমরা অনুসরণ করি তবে কিন্তু আমরা সকলেই বয়সকে ১০ বছর কমিয়ে নিতে পারি।
প্রথমেই জেনে রাখা দরকার কে
ত্বকের বয়সের ছাপ পরে বা ত্বকের এই দশার কারণ কি ?
শুধুমাত্র বয়সের কারণেই যে ত্বক এমন হয়ে যায় তা নয়। ত্বকের তারুণ্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে থাকে অনেক কারণ। অল্প বয়সেও ত্বক তারুণ্য হারিয়ে ফেললে, ত্বকে তা ধরা পরে। বলিরেখা দেখা যায়। হালে দেখা যাচ্ছে, পরিণত বয়সের আগেই চেহারায় বলিরেখা পড়ছে। রুদ্র আবহাওয়া, ত্বকের সঠিক যত্ন না নেয়া, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব, বাজে অভ্যাস, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত রাগ, বলিরেখা পরার কারণ। আমাদের কিছু বদ আভ্যাস থেকেও মুখে বলিরেখা পরে। যেমন গালে হাত দিয়ে রাখা, একটুতেই ভ্রু কুঁচকে থাকা, মুখে বিরক্তি ভাব ইত্যাদি। এই সব কারণে তারুণ্য হারায় ত্বক।
যাঁদের ধূমপানের অভ্যাস আছে তাঁদের ত্বকে দ্রুত বলিরেখা পরে। বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা ধূমপান করে তাদের ত্বক অন্যদের চাইত তাড়াতাড়ি রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যায়। যা থেকে বলিরেখা পরে। কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার অভ্যাস যাদের অতিরিক্ত, তাঁদের ত্বকেও দ্রুত বলিরেখা পরে যাওয়ার সম্ভাবনা। এমনকি অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুডও বলিরেখার কারণ হতে পারে! ত্বক তাতেও বুড়িয়ে যায়। আর ত্বকের বয়সের ছাপ পরার আর একটি কারণ, রাত জেগে কাজ করা। ঘুম কম হলে এর প্রভাব আপনার ত্বকে এবং চুলের উপরেই প্রথম পরবে।
এখন কি দেখে বুঝবেন, যে আপনার ত্বক তার বয়স হারাচ্ছে? এবং কিভাবে যত্ন নেবো?
ত্বকের অল্প বয়সেই তারুণ্য হারানো প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করা যেতে পারে খুব সহজেই। কোনো প্রতিকারের পদক্ষেপ নেয়ার আগে জানতে হবে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে।
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
ত্বকের তারুণ্য হারাবার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে শুষ্ক ত্বক। শুষ্ক ত্বক প্রাণহীন লাগে। শুষ্ক ত্বকে খুব দ্রুত রিঙ্কেল দেখা যায়। বিশেষ করে চোখের চারপাশে। এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে ময়েসচারাইজার।
চামড়া ঝুলে পরা
ত্বকে বয়সের ছাপের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে চামড়ার ইলাস্টিসিটি হারানো। ত্বকের নিচের শিরা উপশিরায় রক্ত সঞ্চালন কমে আসলে ত্বক তার ইলাস্টিসিটি হারায়। ফলে চামড়া ঝুলে যায়। এক্ষেত্রে ফেস মাসাজ ও প্রাণায়াম খুব উপকারি। এতে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
কালো ছোপ
ত্বকের পোড়া কালো ছোপ দেখে বুঝতে হবে আপনার ত্বক বুড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুখের দু’ পাশে, গালে এবং কপালে এই ধরণের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। ত্বকে কালো ছোপ পরার প্রধান কারণ হচ্ছে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি। এর জন্য অবশ্যই এসপিএফ মাত্রার সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
লাইন এবং রিঙ্কেল
বয়সের কারণে ত্বকের লাইন এবং রিঙ্কেল দেখা যায়। চোখের আশে পাশে, কপালে, মুখের চারদিকে বয়সের কারণে লাইন এবং রিঙ্কেল দেখা যায়। লাইন এবং রিঙ্কেল দূর করতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান।
ত্বকে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হওয়া
ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার কারণে ত্বকে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়। একে ওপেন পোরস বলে। বিশেষ করে নাক ও নাকের পাশের ত্বকে এই ধরণের গর্ত দেখা যায়। টমেটোর রস, মুলতানি মাটি প্রলেপ, ডিমের সাদা অংশ এই সবই ত্বকে ছোট ছোট গর্ত বন্ধ করতে সাহায্য করে। ত্বকের এই ধরণের জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারও অনেক বেশি কার্যকরী। হলুদ ফলমূল এবং জল খাওয়া খুব জরুরী।
বয়সের ছাপ রুখতে কি করবেন
চোখের তলায় ভাঁজ, বলিরেখা, খোলা রোমকূপ, নির্জীব ত্বক এসবই বয়সের ছাপের লক্ষণ। বয়স বাড়লে ত্বকে তার প্রভাব পড়বেই। তবে নিয়মিত পরিচর্যায় ত্বক সতেজ ও সুন্দর রাখা সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে ত্বকের যত্ন না নিলে বেশি বয়সের অনেক আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা যায়। তাই অবহেলা না করে শুরু থেকেই ত্বকের যত্ন নেয়া উচিত। প্রথমেই কী কী কারণে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে এবং কীভাবে তা থেকে ত্বককে রক্ষা করবেন, সে ব্যাপারে ধারণা রাখুন।
রোদ থেকে বাঁচুন
ত্বকের সবচেয়ে ক্ষতি করে সরাসরি রোদ। সারাদিন বাইরে রোদের মধ্যে থাকলে, ইউভি রশ্মি থেকে সেল ড্যামেজ হয়। যা এজিংয়ের অন্যতম কারণ। এর ফলে ত্বকের বিভিন্ন স্তর, বিশেষ করে সাপোর্টিভ লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোদে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগাবেন। সঙ্গে ছাতা, সানগ্লাস রাখুন। বিশেষ করে সমুদ্রের ধারে, ঠাণ্ডা জায়গায় বেড়াতে গেলে এই তিনটি জিনিস নিজে নিতে ভুলবেন না। ছাতা, সানগ্লাস আর এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন।
ত্বকের আর্দ্র রাখুন
অতিরিক্ত গরমে বা ঠাণ্ডায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এতে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। সাধারণত সাবান, জল দিয়েই আমরা ত্বক পরিষ্কার করে থাকি। সাবান ব্যবহারের ফলে ত্বকের স্বাভাবিক অ্যাসিড ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের অভাব দেখা যায়। তাছাড়া বেশিক্ষণ এয়ারকন্ডিশনে থাকলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে পরে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে তাই প্রয়োজন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ত্বক নারিশিং করুন
ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য নারিশিং জরুরি। শুষ্ক ত্বক ভালো রাখার জন্য নাইট কেয়ার রুটিন মেনে চলুন। আপনার নারিশিং ক্রিমের উপকরণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এনজাইম ইত্যাদি রয়েছে কি না দেখে নিন।
নজর দিন ত্বকের সব দিকে
শুধু মুখের ত্বক নয়। নজর দিতে হবে সমস্ত শরীরের ত্বকের উপরে। ঘাড়, চোখ ও হাতের অংশে সহজে বয়সের ছাপ ধরা পরে। তার জন্য সঠিক নিয়ম মেনে, ত্বকের যত্ন নিন।
মনে রাখবেন, বাইরে বেরনোর সময় যদি কোন ডে ক্রিমটি ব্যবহার করবেন তাহলে তা যেন spf যুক্ত হয়। এই
টিপসগুলি ফলো করুন। আর কিছু দিন পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তফাৎ তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।