ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল স্ট্রেইট কি করে করবেন ?


রিবন্ডিং হচ্ছে চুল সোজা করার কৃত্রিম ও রাসায়নিক পদ্ধতি। আজকাল কোকড়া চুল তো বটেই সোজা চুলকেও আরো সোজা করার ধুম চলছে। অনেকে আয়রন করে চুল স্ট্রেইট করেন বটে, কিন্তু চুল ধুলে বা শ্যাম্পু করলেই সোজা চুল আর থাকছে না। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে যে আধুনিক পদ্ধতি আছে তাকে বলা হয় হেয়ার রিবন্ডিং। চুল রিবন্ডিং করলে অন্তত ৬ মাস বা এক বছর চুল সোজা থাকে। এই রিবন্ডিং সব ধরণের চুলেই করা যায়। রিবন্ডিং এর কেমিকেল চুলের প্রাকৃতিক বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে চুলের কোকড়া ভাব ও ঢেউ দূর করে আর চুল হয়ে উঠে সোজা, রেশমি, কোমল এবং মোলায়েম। রিবন্ডিং হল মূলত চুল সোজা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এতে অনেক রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় বলে চুল পড়ার ঝুঁকি থাকে,তাই রিবন্ডিং করার পরে চুলের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এটি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই অনেকেই হয়ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পার্লারে গিয়ে রিবন্ডিং করানোর সময় বের করে উঠতে পারেন না । তাছাড়া এতে এতো কেমিকেল ব্যবহার হয় যে তাতে চুলে বারোটা বেজে যায়। আজ আমি ঘরোয়া উপারে কি ভাবে চুল সোজা করা যায় সেই পদ্ধতি টি সেয়ার করবো।



কি কি লাগবে

৫ চামচ মুলতানি মাটি
৩ চামচ বেসন 
মধু ৩ চামচ
২ টো ডিমের সাদা অংশ
১ টা বড় পাকা কলা
কেসটার ওয়েল ২ চামচ
মাঝারি মাপের বাটির ১/২ দুধ
৫ ফোঁটা Essential Oil (optional)

আরও যা যা লাগবে

> চিরুনি – তিন ধরনের চিরুনি চাই। একটি Parting or “Rat Tail” Comb অন্য টি Bristle Brush এবং মোটা দাঁতের চিরুনি
চিরুনিগুলির Details নীচের লিঙ্কে পেয়ে যাবেন
> মাস্ক লাগানোর ব্রাশ
>গোটা কয়েকটি চুলের ক্লিপ
>যে কোন ভালো ব্র্যান্ডের Hair Straightening Shampoo, Straightening Conditioner
>গরম জল ও তোয়ালে


কি ভাবে তৈরি করবেন

প্রথমেই কলা টি মিক্সিতে নিয়ে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে হবে। একদম ক্রিমের মতো ব্লেন্ড করতে হবে। কলার কোন অংশই যেন এর মধ্যে না থাকে। এবার বাকি সব উপাদান মিশিয়ে নিতে হবে। আবার মিক্সি চালিয়ে দিন ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডের জন্য। পেস্ট রেডি।
এই পেস্ট টি তৈরির সময় আমি জল ব্যবহার না করে দুধ ব্যবহার করেছি। দুধ ঠাণ্ডা হওয়া চাই। পেস্টটির একটু ফ্লাপি ও ভারি মতো হবে। জল জল হলে এটি চুলে থাকবে না। ছবি তে যে রকম দেওয়া হয়েছে ঠিক সেই রকম দেখতে হবে পেস্ট।

লাগানোর পদ্ধতি

১। আমি মাস্কটি লাগানোর আগে, চুলে শ্যাম্পু করে নিয়েছি। তবে এক্ষেত্রে আজ আমার শ্যাম্পু ভিন্ন। আজ আমি Pantene Pro-V Curly Hair Curls Straightening Shampoo ব্যবহার করেছি। বাজারে বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু রয়েছে। আপনি যে কোন একটি বাছাই করে নিতে পারেন। সাধারন শ্যাম্পু চুল রিবন্ডিং এর কোন কাজে আসে না। কারন সেই সমস্ত শ্যাম্পুর মধ্যে চুল সোজা করবার গুন থাকে না। তাই Hair Straightening শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিৎ।

যাদের চুল ড্রাই ও রুক্ষ তারা শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল লাগিয়ে নেবেন। আর যাদের চুলে তেল তেল ভাব আছে তারা লেবু রস মেখে শ্যাম্পু করবেন। 

চুল স্বাভাবিক ভাবে শুকোতে দিন। ৯০% শুকিয়ে এলে বুঝতে হবে যে আপনার চুল মাস্ক টি লাগানোর জন রেডি।


২ চুল খুব ভালো করে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আলগা করে নিন। এবার Bristle Brush দিয়ে ৩ থেকে ৪ বার আবার আঁচড়ে নিন। Bristle Brush দিয়ে চুল আঁচড়ালে অনেক অনেক সোজা হয়ে যায়।

৩। এবার Parting or “Rat Tail” চুরুনি দিয়ে সরু করে চুলে কয়েকটি ভাগ করুন এবং ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন।

৪। চুলে মাস্কটি লাগানোর আগে দেখে নিন চুল শুষ্ক লাগছে কি না? যদি লাগে তাহলে খুব সামান্য তেল নিয়ে একবার চুলে হাত বুলিয়ে নিন।



৫। এবার চুলের একটা একটা পার্ট খুলে Parting চিরুনির সরু দানার দিক দিয়ে টেনে টেনে ব্রাশের সাহায্যে মাস্কটি লাগান।

৬। গোটা চুলে লাগানো হয়ে লেগে চুল কিন্তু বেঁধে রাখবেন না। চুল ছাড়া থাকবে। এই ভাবে চুল সোজা করে রাখতে হবে ২ ঘণ্টার মতো যেটা আমি করে থাকি।

৭। ২ ঘণ্টা রাখার পরে চুলে হেয়ার স্টীম নিতে হবে। একটি বড় পাত্রে জল ফুটিয়ে নিন। ঐ গরম জলের পাত্রে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে সেটি নিঙড়ে নিন। তারপর ঐ তোয়ালে টি মাথায় পেচিয়ে নিন। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য ও অবস্থা অনুযায়ী সময় দিন।

৮। স্টীম নেওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে চুল ধুয়ে নিতে হবে। আমি চুল ধোয়ার সময়ও মাথা সোজা রাখি। সাওয়ার ছেড়ে বা মগ দিয়ে চুলের উপরে জল ঠেলে পরিষ্কার করি।

৯। পুরো মাস্ক চুল থেকে সরে গেলে Pantene Pro-V Curly Hair Straightening Conditioner লাগিয়ে নিয়ে ৫ মিনিট পরে আবার Straightening Shampoo ব্যবহার করি।

১০। আমি চুল স্বাভাবিক ভাবেই শুকাই। তারপর Bristle Brush দিয়ে চুল খুব ভালো করে আঁচড়ে নেই।
প্রয়োজনে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখুন হিট যেন মধ্যম প্রকৃতির হয়।
এখন এই টোটাল প্রসেসটা হয়ে যাবার পরে প্রথম প্রশ্ন আসে যে চুল কতো দিন সোজা থাকবে ? আমি যদি আমার কথা বলি, তাহলে বলবো ১০ থেকে ১২ দিন চুল বেশ ভালোই সোজা থাকে। তবে এর জন্য আমাকে চুলের বারতি যত্ন নিতে হয়।
এই পদ্ধতিটি প্রয়োগের ৪ দিন পরে আমি প্রথম শ্যাম্পু লাগাই। শ্যাম্পু লাগানোর ২০ মিনিট আগে আমি চুলে দুধ লাগাই। তারপর Straightening ShampooConditioner তবে পরিমাণে অনেক কম লাগাই।
এছাড়াও চুল সোজা রাখার জন্য আমি বাড়িতে যতক্ষণ থাকি চুল ছেড়েই রাখি। বেনুনি বাঁধি না , শুধু খুব হালকা করে ক্লেচার দিয়ে চুল বেঁধে রাখি।


এখন প্রশ্ন হল কি ধরনের চুলে কি রকমের প্রভাব আসবে ?

যাদের চুল খুব ক্লার্লি আমি তাদের কথা ঠিক বলতে পারছি না। কারন আমি এমন কারও উপরে এটা প্রয়োগ করে দেখি না। খুব ভালো হয় যদি ক্লার্লি হেয়ারের কেউ এটা ব্যবহার করে আমাকে ফিড ব্যাক দেয়। তাহলে একটা আইডিয়া হবে। ক্লার্লি হেয়ার যাদের তাহের সাজেস্ট করবো ৭ দিন অন্তর অন্তর চুলে মাস্কটি লাগানোর।

যাদের চুল আমার মতো একটু সামান্য ঢেউ ভাব রয়েছে তাদের চুলে এই মাক্সের কি প্রভাব হবে সেটা আমার চুল দেখেই নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে।

আর যাদের চুল স্ট্রেট কিন্তু আরও স্ট্রেট করার ইচ্ছা, তাহলে বলবো এই প্যাক দারুণ ভাবে স্ট্রেট চুলের উপরে কাজ করে। মাসে দু বার ব্যবহার করুন। চুল যেমন ঝলমলে হবে তেমনি চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে।

এরই মধ্যে যারা রিবন্ডিং করিয়েছেন তাদের বলবো, ৩ মাস পর থেকে মাস্কটি ২০  থেকে ২৫ দিন অন্তর অন্তর লাগান। তবে মুলতানি মাটি ছাড়াই মাস্কটি বানাতে হবে।  

শেষে একটা কথাই বলবো রাসায়নিক পদ্ধতি আর প্রাকৃতিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। তবে যারা আমার মতো প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা করতে ভালবাসেন তাদের কাছে এই চুল স্ট্রেট করার মাস্কটি ভালো লাগবে।

এই হল আমার চুল সোজা করার প্রাকৃতিক পদ্ধতি। কেমন লাগলো জানাবেন। পদ্ধতিটি ট্রাই করলে অবশ্যই ছবি পোস্টের নীচে দিয়ে দেবেন।